বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পড়ার খরচ…
"কেন সায়েন্স নিয়েছো? বড় হয়ে কি হতে চাও?"
আমরা কেউ বলছিলাম ডাক্তার হবো, কেউ বলছিলাম শিক্ষক হবো, কেউ বলছিলাম ইঞ্জিনিয়ার হবো কিন্তু কেউ একদমই নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারছিলাম না। আমার সবচেয়ে কাছের বান্ধবীটি দাঁড়িয়ে দৃঢ়স্বরে বললো, বুয়েটে পড়তে চাই! কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে! তখন পাশে থেকেই কেউ একজন বলে উঠেছিল,
"এহ! এত সহজ না! চান্স পেতে হয়!"
যদিও মন্তব্যটি তখন একদমই ভালো লাগেনি আমাদের, কিন্তু ওই বন্ধুটি যেভাবেই বলুক না কেন, কথা কিন্তু সত্য। আসলেই চান্স পেতে হয়। চান্স পেতে ভালো পড়াশোনার সাথে সাথে ভাগ্যও লাগে। আমি আমার অনেক বন্ধুকেই দেখেছি- প্রচন্ড ভালো শিক্ষার্থী, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পেয়ে মন খারাপ করে বসে আছে।
আপনার সন্তানের জন্য যদি এমন হয়??? তখন কি করবেন??? পছন্দের বিষয়ে চান্স পায়নি বলে মন খারাপ করে বসে থাকতে দেবেন?? অবশ্যই না! আমি জানি, আপনি ঠিকই কোন না কোন উপায় বের করে ফেলবেন আপনার আদরের সন্তানটির স্বপ্ন পূরণের। আমার ওই বান্ধবীটি কিন্তু বুয়েটে চান্স পায়নি, তাই বলে সে অন্য কারো থেকে পিছিয়েও থাকেনি একটুও! ঠিকই বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে নিজের পছন্দের বিষয়ে। আপনিও নিশ্চয়ই আপনার সন্তানকে তার স্বপ্নের কর্মক্ষেত্রে কাজ করতে দেখতে চান! তাহলে আমি বলবো, আপনার সন্তানের বয়স যতই হোক না কেন, পরিকল্পনা আপনার আজ থেকেই শুরু করা উচিত।
আমাদের দেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে তেমন বেশি পরিমাণে খরচ হয় না; চিন্তা হচ্ছে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচ নিয়ে। ভালো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক খরচ মোটামুটি কম না। আপনার সন্তানের জন্য ভবিষ্যত পরিকল্পনা করতে অবশ্যই কত খরচ হতে পারে সে সম্পর্কে একটি ধারণা নিতে হবে আপনাকে।
ভালোমানের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সম্ভাব্য খরচের একটি তালিকা তৈরি করেছে স্মার্টকম্পেয়ার ডট কম-এর রিসার্চ টীমঃ
তালিকা দেখে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন! কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ৪ বছরের স্নাতক কোর্স-এর জন্য আপনার প্রায় ৪লাখ থেকে ৮লাখ টাকা খরচ হবে। শুধুমাত্র ইউনিভার্সিটি’র খরচ বাদ দিয়েও আরো কিছু বাড়তি খরচ হবে আপনার সন্তানের জন্য। যেহেতু আপনি তাকে কম্পিউটার সায়েন্সে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াতে চাচ্ছেন অতিরিক্ত কিছু প্রযুক্তিগত সুবিধা দিতে হতে পারে আপনার সন্তানকে। সেক্ষেত্রে কিছু “ইমার্জেন্সি মানি”র ব্যবস্থা রাখতেই হবে আপনাকে। এছাড়াও বই, ফটোকপি, পকেটমানি মিলিয়ে আরো কিছু খরচ রয়েছে। আর আপনি যদি ঢাকার বাইরে থাকেন আর সন্তানকে ঢাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে চান তাহলে তার মেস চার্জ, ডাইনিং খরচ সহ আরো কিছু খরচ গুণতে হবে আপনাকে। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলবো- বই, ফটোকপি আর পকেটমানি মিলিয়ে প্রায় ৪,০০০ টাকা প্রতিমাসে খরচ হয়েই যায়। ছাত্রদের মেস ভাড়া আনুমানিক ৩,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ৬,০০০ টাকা; ডাইনিং এর খরচ আলাদা করে ১,৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ২,৫০০ টাকা। ছাত্রীদের জন্য এই খরচ ৪,০০০ টাকা থেকে ৮,০০০ টাকা এবং ১,৫০০ টাকা থেকে ২,৫০০ টাকা। পুরো টাকাই যে জমিয়ে রাখতে হবে তা কিন্তু নয়। তবে সিংহভাগ টাকা জমিয়ে রাখা ভালো। এক্ষেত্রে মনে রাখবেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফলাফল-এর ভিত্তিতে কিছু ছাড় পাওয়ার সুযোগ আছে। আপনি যত টাকা জমিয়ে রাখবেন তার কিছু অংশ যদি আপনার সন্তানের ভালো ফলাফলের জন্য বেঁচে যায় তাহলে সেই টাকাটা কিন্তু আপনি বাড়তি হিসেবে অন্য কাজে খরচ করতেই পারেন! তাই আমি আবারো বলবো, সিংহভাগ টাকা জমিয়ে রাখুন। টাকা জমানোর জন্য খুলতে পারেন মাসিক ডিপিএস। প্রতি মাসে অল্প অল্প করে টাকা জমাতে পারেন এখানে। এ্যাকাউন্টের ম্যাচিউরিটি আসলে একটি ভালো অংকের লাভসহ টাকা উইথড্র করতে পারবেন আপনি। এছাড়া ফিক্সড ডিপোজিটও একটি ভালো উপায় হতে পারে। ব্যাংকের স্কীমগুলো সম্পর্কে ধারণা নিতে যোগাযোগ করতে পারেন অভিজ্ঞ কারো সংগে।
No comments